ভূমিকা
দার্জিলিং, গ্যাংটক, এবং পেল্লিং হল হিমালয়ের তিনটি সুন্দর জায়গা। দার্জিলিং তার চা বাগান ও টয় ট্রেনের জন্য বিখ্যাত। গ্যাংটক সিকিমের রাজধানী, যেখানে আপনি হ্রদ, জলপ্রপাত, এবং বৌদ্ধ মঠ দেখতে পাবেন। পেল্লিং কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্যের জন্য পরিচিত। এই ৬ দিনের ভ্রমণে আপনি কলকাতা থেকে শুরু করে এই তিনটি জায়গার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। এই নিবন্ধটি ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রদের জন্য সহজ ভাষায় লেখা, যাতে সবাই সহজে বুঝতে পারে।
দিনভিত্তিক ভ্রমণ পরিকল্পনা
দিন ১: কলকাতা থেকে দার্জিলিং
কীভাবে যাবেন: সকালে কলকাতা থেকে ট্রেনে (দার্জিলিং মেইল) নিউ জলপাইগুড়ি (NJP) বা বিমানে বাগডোগরা যান। NJP বা বাগডোগরা থেকে শেয়ার্ড ট্যাক্সি বা বাসে দার্জিলিং পৌঁছান, যা প্রায় ৩-৪ ঘন্টা লাগে। শেয়ার্ড ট্যাক্সির ভাড়া জনপ্রতি ৪০০-৬০০ টাকা, আর বাসের ভাড়া ১৩০-১৫০ টাকা।
কী করবেন: দার্জিলিং পৌঁছে হোটেলে চেক-ইন করুন। সন্ধ্যায় মল রোডে ঘুরুন, যেখানে দোকান আর স্ট্রিট ফুড পাবেন।
কোথায় থাকবেন: হোটেল টাওয়ার ভিউ, দেজং রিট্রিট, বা হোমস্টে দার্জিলিং-এ থাকুন। রুমের ভাড়া ৬০০-৮০০ টাকা।
দিন ২: দার্জিলিং
সকালে: ভোর ৫টায় টাইগার হিলে যান কাঞ্চনজঙ্ঘার উপর সূর্যোদয় দেখতে। ফেরার পথে বাতাসিয়া লুপ দেখুন, যেখানে টয় ট্রেনের সুন্দর দৃশ্য আর একটি যুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ আছে। ঘুম মনেস্ট্রিতে ১৫ ফুট উঁচু বুদ্ধ মূর্তি দেখুন।
বিকেলে: হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট (HMI) এবং পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুওলজিক্যাল পার্কে যান। পার্কে রেড পান্ডা, স্নো লেপার্ড, এবং হিমালয়ান উলফ দেখতে পাবেন। প্রবেশ মূল্য ৬০ টাকা। এরপর হ্যাপি ভ্যালি টি এস্টেটে চা বাগান দেখুন। ১০০ টাকায় গাইডেড ট্যুর নিতে পারেন।
সন্ধ্যায়: দার্জিলিং মল ঘুরুন এবং টয় ট্রেনে চড়ুন, যা ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট।
দিন ৩: দার্জিলিং থেকে গ্যাংটক
কীভাবে যাবেন: সকালে শেয়ার্ড ট্যাক্সিতে গ্যাংটক যান, যা প্রায় ৪-৫ ঘন্টা লাগে। ভাড়া জনপ্রতি ৪০০ টাকা। সিকিমে প্রবেশের জন্য ইনার লাইন পারমিট (ILP) লাগবে, যা রংপো চেকপোস্ট বা শিলিগুড়ির সিকিম ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন সেন্টার থেকে বিনামূল্যে পাওয়া যায়। পাসপোর্ট, ভিসা, এবং ২-৪টি ছবি লাগবে।
কী করবেন: গ্যাংটক পৌঁছে হোটেলে চেক-ইন করুন। বিকেলে MG মার্গে ঘুরুন, যেখানে ফুল দিয়ে সাজানো দোকান আর মহাত্মা গান্ধীর মূর্তি আছে। সন্ধ্যায় দো-দ্রুল চোর্তেন বা রুমটেক মনেস্ট্রি দেখুন।
কোথায় থাকবেন: হোটেল টেন্যান্সি বা ডোমা রেসিডেন্সিতে থাকুন। খরচ ৭৯৯-১০০০ টাকা, কখনও কখনও খাবারসহ।
দিন ৪: গ্যাংটক
সকালে: চাংগু লেক (Tsomgo Lake) এবং বাবা মন্দির দেখতে যান, যা গ্যাংটক থেকে ৩-৪ ঘন্টার পথ। শীতকালে লেকের জল বরফ হয়ে যায়। রোপওয়েতে চড়তে জনপ্রতি ৩২৫ টাকা লাগে। এই জায়গায় যাওয়ার জন্য পারমিট লাগবে।
বিকেলে: গ্যাংটক ফিরে নামগ্যাল ইনস্টিটিউট অফ তিব্বেটোলজি দেখুন, যেখানে বৌদ্ধ মূর্তি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবেন। এনচে মনেস্ট্রি বা বান ঝাকরি ফলস দেখুন।
সন্ধ্যায়: গ্যাংটক রোপওয়েতে চড়ে শহরের উপর থেকে দৃশ্য দেখুন।

দিন ৫: গ্যাংটক থেকে পেল্লিং
কীভাবে যাবেন: সকালে শেয়ার্ড ট্যাক্সিতে পেল্লিং যান, যা প্রায় ৫-৬ ঘন্টা লাগে। ভাড়া জনপ্রতি ৪০০ টাকা।
কী করবেন: পেল্লিং পৌঁছে হোটেলে চেক-ইন করুন। বিকেলে পেমায়াংতসে মনেস্ট্রি এবং রাবদেন্তসে রুইন্স দেখুন। সন্ধ্যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য উপভোগ করুন।
কোথায় থাকবেন: অধিকারী হোমস্টে বা মাউন্টেন ভিউ পাসাধি কমফর্টস্টেতে থাকুন। খরচ ৬০০-১০০০ টাকা।
দিন ৬: পেল্লিং থেকে কলকাতা
কীভাবে ফিরবেন: সকালে শেয়ার্ড ট্যাক্সিতে NJP বা বাগডোগরা ফিরুন। ভাড়া ৪৫০-৫০০ টাকা। বিকেলে ট্রেন বা বিমানে কলকাতা ফিরে আসুন।
পরিবহন
- কলকাতা থেকে দার্জিলিং: ট্রেনে NJP (দার্জিলিং মেইল) বা বিমানে বাগডোগরা। NJP থেকে দার্জিলিং শেয়ার্ড ট্যাক্সি (৪০০-৬০০ টাকা) বা বাস (১৩০-১৫০ টাকা)।
- দার্জিলিং থেকে গ্যাংটক: শেয়ার্ড ট্যাক্সি (৪০০ টাকা)।
- গ্যাংটক থেকে পেল্লিং: শেয়ার্ড ট্যাক্সি (৪০০ টাকা)।
- পেল্লিং থেকে কলকাতা: শেয়ার্ড ট্যাক্সিতে NJP/বাগডোগরা (৪৫০-৫০০ টাকা), তারপর ট্রেন বা বিমানে কলকাতা।
আবাসন
স্থান | বিকল্প | খরচ (প্রতি রাত) |
---|---|---|
দার্জিলিং | হোটেল টাওয়ার ভিউ, হোমস্টে দার্জিলিং | ৬০০-৮০০ টাকা |
গ্যাংটক | হোটেল টেন্যান্সি, ডোমা রেসিডেন্সি | ৭৯৯-১০০০ টাকা |
পেল্লিং | অধিকারী হোমস্টে, মাউন্টেন ভিউ | ৬০০-১০০০ টাকা |
খাবার
- দার্জিলিং: মোমো, থুকপা, আলু দম, এবং দার্জিলিং চা। কুঙ্গা রেস্তোরাঁয় মোমো ও নুডলস খান। স্ট্রিট ফুডের দাম ১৫০-২০০ টাকা।
- গ্যাংটক: শা ফালে, মোমো, চাউমিন। MG মার্গে স্ট্রিট ফুড পান, যেমন ফালে (৩০-৩৫ টাকা), চাউমিন (৫০ টাকা)। বেকাস ক্যাফে বা ড্রাগন ওয়াক রেস্তোরাঁয় খান।
- পেল্লিং: মোমো, থুকপা। মেল্টিং পয়েন্ট রেস্তোরাঁয় দুজনের জন্য ৩০০-৫০০ টাকায় খাবার পান।
বাজেট ব্যবস্থাপনা
- পরিবহন: শেয়ার্ড ট্যাক্সি বা বাস ব্যবহার করুন। রিজার্ভ গাড়ির ভাড়া (১৭৬০-৫৪৯৯ টাকা) এড়িয়ে চলুন।
- আবাসন: বাজেট হোটেল বা হোমস্টে বেছে নিন। গ্রুপে ভ্রমণ করলে রুম শেয়ার করে খরচ কমান। অফ-সিজনে (জানুয়ারি-মার্চ) ভ্রমণ করুন।
- খাবার: স্ট্রিট ফুড বা ছোট রেস্তোরাঁয় খান। হোমস্টেতে খাবার প্যাকেজ নিলে খরচ কমবে।
স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা
- স্বাস্থ্য: পাহাড়ে উচ্চতাজনিত অসুস্থতা এড়াতে ধীরে ধীরে উঠুন এবং পানি পান করুন। মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারি বা ক্রিম ব্যবহার করুন।
- নিরাপত্তা: বর্ষাকালে (জুলাই-আগস্ট) ভ্রমণ এড়ান, কারণ ধস নামার ঝুঁকি থাকে। ভালো গ্রিপের জুত
পুজোর আগে ওজন কমাও স্বাস্থ্যকরভাবে – মাত্র ৭ দিনে নিজেকে রেডি করো!
শেষ কথা
এই ৬ দিনের ভ্রমণে আপনি হিমালয়ের সৌন্দর্য, স্থানীয় সংস্কৃতি এবং সুস্বাদু খাবার উপভোগ করবেন। ভ্রমণের আগে সব তথ্য যাচাই করুন এবং একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা নিন।
দার্জিলিং, গ্যাংটক এবং পেল্লিং ভ্রমণের সেরা সময় কী?
- সেরা সময় মার্চ থেকে জুন এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর। বর্ষাকাল (জুলাই-আগস্ট) এড়িয়ে চলুন।
২. সিকিম ভ্রমণের জন্য কোনো বিশেষ পারমিট লাগে কি?
- হ্যাঁ, গ্যাংটক এবং পেল্লিং (সিকিম) যাওয়ার জন্য ILP প্রয়োজন, যা রাঙ্গুর বা সিলিগুড়িতে পাসপোর্ট এবং ভিসা দিয়ে পাওয়া যায়।
৩. বাংলাদেশ থেকে কীভাবে ভ্রমণ করব?
- বুরিমারি-চেঙ্গাবান্ধা বা বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত পার হয়ে সিলিগুড়ি বা NJP যান, তারপর শেয়ার্ড ট্যাক্সি বা বাসে দার্জিলিং এবং গ্যাংটক।
৪. কোন কোন স্থানীয় খাবার চেখে দেখতে হবে?
- দার্জিলিং-এ মোমো, থুকপা, আলু দম, দার্জিলিং চা। গ্যাংটক-এ সেল রুটি, কিনেমা, ছুর্পি। পেল্লিং-এ গুন্দ্রুক, সিকিমিজ থালি।
৫. ৬ দিনের ভ্রমণের খরচ কত হবে প্রায়?
- বাজেট ভ্রমণের জন্য প্রতি ব্যক্তি প্রায় ₹10,200 – ₹15,300, যা পরিবহন, আবাসন, খাবার এবং সাইটসিয়িং ফি সহ।
“৬ দিনে তিন পাহাড়ি স্বর্গ: দার্জিলিং, গ্যাংটক ও পেল্লিং ভ্রমণের ডায়েরি”-এ 1-টি মন্তব্য
মন্তব্য করা বন্ধ রয়েছে।