দাম্মাম শহরে বাড়ছে বন্যার ঝুঁকি: জলবায়ু পরিবর্তন, দ্রুত নগরায়ণ ও দুর্বল অবকাঠামোর জটিল প্রভাব বিশ্লেষণ

By Arafat

Published On:

Follow Us
দাম্মাম শহরে বাড়ছে বন্যার ঝুঁকি: জলবায়ু পরিবর্তন, দ্রুত নগরায়ণ ও দুর্বল অবকাঠামোর জটিল প্রভাব বিশ্লেষণ

দাম্মাম (Dammam) সৌদি আরবের একটি অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, শহরটি একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি—দাম্মাম প্লাবন ঝুঁকি দ্রুত বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, দ্রুত নগরায়ণ এবং দুর্বল অবকাঠামোর কারণে এই ঝুঁকি আরও তীব্র হয়ে উঠছে।

জাতীয় পানি কোম্পানি (NWC) এবং সিভিল ডিফেন্স (GDCD) এর মতো সংস্থাগুলো ইতিমধ্যেই বড় আকারের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধুমাত্র সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। নাগরিকদের সচেতনতা এবং ব্যক্তিপর্যায়ে প্রস্তুতি ছাড়া এ সমস্যা দীর্ঘমেয়াদে মোকাবিলা সম্ভব হবে না।

জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বৈত প্রভাব

সৌদি আরবে ১৯৭৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ২.১°C, যা বৈশ্বিক গড়ের প্রায় তিনগুণ। দাম্মামের মতো উপকূলীয় শহরগুলোতে তীব্র গরমের পাশাপাশি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ঝুঁকি রয়েছে। এর ফলে নিচু এলাকাগুলো দ্রুত প্লাবিত হচ্ছে।

আবহাওয়া গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, যদিও দাম্মামের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত কমেছে, তবু ভারী বৃষ্টিপাতের ঘটনা বেড়েছে। হঠাৎ করে অল্প সময়ে তীব্র বৃষ্টিপাত শহরের নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে তুলছে। এপ্রিল ২০২৪ সালে উপসাগরীয় অঞ্চলে একদিনেই এক বছরের সমান বৃষ্টি হওয়া এর স্পষ্ট উদাহরণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু গবেষক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, “বার্ষিক বৃষ্টিপাত কমলেও চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো বাড়ছে। এই দ্বৈত প্রবণতাই শহুরে প্লাবনের মূল কারণ।”

দ্রুত নগরায়ণ ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা

১৯৭২ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে দাম্মামের নগরায়িত এলাকা ১১ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন সড়ক, ভবন ও কংক্রিট কাঠামো মাটির পানি শোষণ ক্ষমতা কমিয়েছে। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই জমে যাচ্ছে পানি।

২০১৮ সালের প্রবল বৃষ্টিপাতে শহরের পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। যানজট, দুর্ঘটনা এবং নিচু এলাকার ঘরবাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, ভৌগোলিক কারণ যেমন ঢাল (slope) ও উচ্চতা (elevation) প্লাবন ঝুঁকিতে ৫০% এর বেশি অবদান রাখে।

দাম্মাম শহরে বাড়ছে বন্যার ঝুঁকি: জলবায়ু পরিবর্তন, দ্রুত নগরায়ণ ও দুর্বল অবকাঠামোর জটিল প্রভাব বিশ্লেষণ

ফ্লাড ম্যাপ ও টুলস: নাগরিক প্রস্তুতির হাতিয়ার

সৌদি আরব জাতীয় পর্যায়ে একটি বন্যা সংবেদনশীলতা মানচিত্র তৈরি করেছে, যার নির্ভুলতার হার ৯৩.৩%। পাশাপাশি, UNU-INWEH এর ফ্লাড ম্যাপিং টুল নাগরিকদের তাদের এলাকায় অতীত বন্যার ধরন বুঝতে সাহায্য করে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্থানীয় সরকার প্রদত্ত তথ্য সবচেয়ে কার্যকর।

ক্লাইমেট সেন্ট্রালের “FloodVision” টুল মূলত সরকারি ও পেশাদার ব্যবহারের জন্য তৈরি, সাধারণ নাগরিকদের জন্য নয়।

ফেলে দেওয়ার আগে জানুন: ৭টি ঘরের জিনিস যা আপনি আজই রিসাইকেল করে পৃথিবী বাঁচিয়ে ফেলতে পারেন

সরকারের উদ্যোগ

ন্যাশনাল ওয়াটার কোম্পানি (NWC) ১.৫ বিলিয়ন সৌদি রিয়ালের ১২টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে কিং ফাহদ শহরতলির ড্রেনেজ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৪২৭ মিলিয়ন রিয়াল। পাশাপাশি নতুন পানি শোধনাগার ও নিষ্কাশন নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ চলছে।

জেনারেল ডিরেক্টরেট অফ সিভিল ডিফেন্স (GDCD) উন্নত পূর্বাভাস প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। তারা নিয়মিতভাবে সতর্কবার্তা জারি করে জনগণকে ঝুঁকি থেকে দূরে থাকতে বলছে।

সিভিল ডিফেন্সের এক কর্মকর্তা আরব নিউজকে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো জনগণকে আগেভাগেই সতর্ক করা, যাতে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি কমানো যায়।”

সোশ্যাল মিডিয়া ও জনসচেতনতা

২০২৩ সালের নভেম্বরে দাম্মামে শিলাবৃষ্টি ও বন্যার দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। গাড়ি ভেসে যাওয়া বা রাস্তা প্লাবিত হওয়ার ভিডিও মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তব হুমকি বোঝাতে সহায়তা করেছে।

তবে ভুল তথ্যও দ্রুত ছড়ায়। এজন্য সিভিল ডিফেন্স নাগরিকদের শুধুমাত্র সরকারি উৎসের তথ্য অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছে।

বৈদ্যুতিক বিমান কি সত্যিই আকাশ ভাঙবে — সুবিধা, সীমা ও বাস্তবতার সবকিছু জানুন

নাগরিকদের করণীয়

‘টপ-ডাউন’ সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ‘বটম-আপ’ নাগরিক প্রস্তুতিও জরুরি। বিশেষজ্ঞরা নাগরিকদের জন্য কয়েকটি নির্দেশিকা দিয়েছেন:

  • উপত্যকা বা নিচু এলাকা থেকে দূরে থাকুন।
  • বন্যার পানিতে গাড়ি বা হাঁটা এড়িয়ে চলুন।
  • সরকারি আবহাওয়ার তথ্য অনুসরণ করুন।
  • ঝড়ের সময় অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ বন্ধ রাখুন।

একটি সমন্বিত ভবিষ্যৎ

দাম্মাম শহরের প্লাবন ঝুঁকি কেবল প্রাকৃতিক কারণে নয়; দ্রুত নগরায়ণ ও অবকাঠামোগত দুর্বলতার মতো মানবসৃষ্ট কারণও এতে বড় ভূমিকা রাখছে। তাই সমাধানও হতে হবে বহুমুখী।

নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, কেবল কংক্রিটভিত্তিক অবকাঠামো নয়, সবুজ অবকাঠামোও জরুরি। পার্ক, উন্মুক্ত স্থান এবং পানি শোষণক্ষম জমি প্লাবন ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

শেষ পর্যন্ত, দাম্মামকে টেকসই ও নিরাপদ করতে হলে সরকার, বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ মানুষের সমন্বিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।

Hey, I'm Arafat Hossain! With 7 years of experience, I'm all about reviewing the coolest gadgets, from cutting-edge AI tech to the latest mobiles and laptops. My passion for new technology shines through in my detailed, honest reviews on opaui.com, helping you choose the best gear out there

You Might Also Like